সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক যুগ ধরে চলা স্কুলফিডিং কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দরিদ্র শিক্ষার্থীদের স্কুলে ধরে রাখা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট এনজিও কর্মকর্তা ও শিক্ষকরা এ ধরনের কথা বলছেন।
তারা বলছেন, স্কুলফিডিং চালু হওয়ায় দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার বেড়ে যায়। দীর্ঘ ১২ বছর পর ২০২১ সালের ৩০ জুন এই প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে। যার প্রতিক্রিয়া পড়তে শুরু করেছে স্কুলগুলোতে। স্কুলফিডিং না থাকায় কমতে শুরু করেছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার। এ নিয়ে যশোরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ লাখ ১৪ হাজার সুবিধাভোগীর মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।
যশোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, জেলার তিনটি উপজেলায় স্কুলফিডিং ও মিড ডে মিল প্রকল্প চালু হয় ২০১২ সালে। উপজেলাগুলো হচ্ছে, সদর, ঝিকরগাছা ও চৌগাছা। এই তিনটি উপজেলার মোট পাঁচশ’ ২৮ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে স্কুল ফিডিং প্রকল্পের আওতায় আনা হয়। উচ্চ পুষ্টিমান সম্পন্ন বিস্কুট দেয়া হয় এসব স্কুলের শিক্ষার্থীকে। ২০২১ সালের হিসেব অনুযায়ী, সদর উপজেলায় ২৫৬ টি স্কুলের ৫৭ হাজার ৫৪৮ জন, ঝিকরগাছার ১৩৩ টি স্কুলের ২৮ হাজার ২৯৩ জন ও চৌগাছার ১৩৯ টি স্কুলের ২৮ হাজার ১০০ শিশু এই সুবিধার আওতায় ছিল। পাশাপাশি ঝিকরগাছার ২০ টি স্কুলের ৪ হাজার ২৫৪ জন শিশুর জন্য চালু ছিল মিড ডে মিল। তাদেরকে পুষ্টিসম্পন্ন খিচুড়ি খাওয়ানো হতো।
সদর ও চৌগাছা উপজেলায় স্কুলফিডিং কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে ছিল বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আরআরএফ। ঝিকরগাছার দায়িত্বে ছিল উত্তরণ নামে আরেকটি এনজিও।
আরআরএফের প্রকল্প সমন্বয়কারী আব্দুল আজিজ জানিয়েছেন, ২০২১ সালের ৩০ জুন স্কুলফিডিং প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে। দীর্ঘ ১২ বছর চলার পর এই প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে স্কুলে উপস্থিতির হার কমতে শুরু করেছে। স্কুলফিডিং প্রকল্প চালু না থাকায় দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ধরে রাখা চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করছেন প্রধান শিক্ষকরা। তারা অবিলম্বে এই প্রকল্প চালুর দাবি জানিয়েছেন।
- বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকরা বলছেন, বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে দরিদ্র মানুষের মধ্যে তাদের সন্তানদের পুষ্টির যোগান দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। স্কুলফিডিং প্রকল্প চালু থাকলে লক্ষাধিক দরিদ্র শিক্ষার্থী পুষ্টিহীনতার হাত থেকে রক্ষা পাবে বলে মনে করেন শিক্ষকরা। এক কথায় স্কুল ফিডিং প্রকল্প প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আশার আলো জাগানিয়া একটি প্রকল্প। এই প্রকল্প গত ১২ বছর ধরে ঝরেপড়া রোধ করেছে।
- আরআরএফের প্রকল্প সমন্বয়কারী আব্দুল আজিজ বলেন, স্কুলফিডিং প্রকল্প চালু হলে দারিদ্র্যপীড়িত এলাকার শিশুরা বিদ্যালয়মুখি হবে। প্রকল্পটি চালু না হলে পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হবে যশোর সদর ও চৌগাছা উপজেলার ৮৩ হাজার ৩৮ জনসহ জেলার ১ লাখ ১৪ হাজার শিশু শিক্ষার্থী।
বিশ্ব খাদ্য সংস্থার একাধিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, স্কুলফিডিং কর্মসূচি থাকায় শিক্ষার্থীর উপস্থিতি বেড়েছে, ঝরেপড়া কমেছে। ছাত্রীদের বিদ্যালয়ে ভর্তির হার বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশে জেন্ডার সমতা নিশ্চিত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা নিয়মিত পুষ্টিমানসম্পন্ন বিস্কুট খাওয়ায় তাদের প্রোটিন ঘাটতি কমেছে। অতিদরিদ্র পরিবারগুলোর দৈনিক খাদ্য ব্যয় ৪.৪ শতাংশ কমেছে; এ কর্মসূচি ওই পরিবারগুলোর বার্ষিক আয় চার শতাংশ বৃদ্ধি করতে পেরেছে।
প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের রান্না করা গরম খাবারসহ অন্যান্য খাবার দিতে জাতীয় স্কুল মিল নীতিমালা-২০১৯ ইতিমধ্যে পাস হয়েছে। এর আলোকে পাঁচ বছরের জন্য শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবার হিসেবে খিচুড়ি দিতে ১৭ হাজার ২৯০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করা হয়। এটি ২০২১ সালের ১ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হলে প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে কিছু অনুশাসন দেন। তখন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বাস্তবায়ন নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকায় প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়নি।’ এরপর এক বছরের বেশি সময় পার হয়েছে, কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অনুযায়ী নতুন প্রকল্প এক বছর পার হওয়ার পরও উপস্থাপিত হয়নি।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।